নোয়াখালীতে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত

দেশের খবর

‘আইন মেনে সড়কে চলি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সমাবেশ, বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে নোয়াখালীতে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৩ পালিত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে রবিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০:০০ ঘটিকায় বর্ণাঢ্য র‌্যালির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্মুখ প্রাঙ্গন হতে কিরণমোড় পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্মুখ প্রাঙ্গন এসে উক্ত বর্ণাঢ্য র‌্যালি শেষ হয়। র‌্যালি পরবর্তী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসন সহযোগিতায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনাব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রশাসক, নোয়াখালী; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী জেলার সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মো: মোর্তাহিন বিল্লাহ, সিভিল সার্জন জনাব ডা. মাসুম ইফতেখার। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব তামান্ন মাহমুদ। উক্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার করেন সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জনাব কে এইচ তাসফিকুর রহমান। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) জনাব আবদুল্লাহ আল মামুন, মোটরযান পরিদর্শক জনাব মাহবুব রাব্বানী, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জনাব সুজিত রায় আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন পদমর্যাদার পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যমকর্মী।

স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে বিআরটিএ, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), জনাব আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন- এ দিবসকে যথাযোগ্য মার্যাদায় সাফল্য মণ্ডিত করার জন্য বর্তমান সরকার, জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ এবং সড়ক পরিবহনের সম্মানিত মালিক শ্রমিকবৃন্দ স্ব স্ব অধিক্ষেত্র থেকে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আশা করছি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে অধিকতর সচেতন হবে এবং এ থেকে দীক্ষা অর্জন করে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

তিনি আরো বলেন – সড়কে নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা অনেকেই যথেষ্ট ধারণা রাখি এবং নিয়ম- কানুনগুলোও আমাদের সকলেরই জানা আছে। তবে বাকী রয়েছে শুধুমাত্র মানা বা আমলে নেওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করবেন এবং তাঁদের এ উপদেশগুলো থেকে আমরা জানতে পারবো, কী কী কারণে সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে এবং এ থেকে বাঁচার উপায় গুলো কী? এক্ষেত্রে, আলোচনা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সভা সমাবেশ অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই।

শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি জনাব মো: আবুল বাহার বলেন – নিরাপদ সড়ক বলতে কি মহাসড়কে নসিমন করিমন ও ফুটপাতকে অবৈধ দখলকে বুঝায়? তিনি বলেন- মহাসড়ক থেকে বৈধ ভাবে চলাচলরত নসিমন ও করিমন বন্ধে ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লষ্টি সকলকে অনুরোধ জানান।

নিরাপদ সড়ক চাই এর নোয়াখালীর জেলার প্রতিনিধি বলেন – যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের কার্যকরী ভুমিকা পালনে করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার, জনাব নুর উদ্দিন মো: জাহাঙ্গীর বলেন – যথাযথভাবে শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ সকলস্তরের জনসাধারণ যদি জেব্রা ক্রেসিং ও ফুটওভার ব্রিজ যথাযথ ভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করে তা হলে সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।

চালকদের প্রতিনিধি জনাব সিরাজুল ইসলাম বলেন- সড়ক, জনগণ ও যানবাহন নিয়ে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা, সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নাই। এই ব্যপারের চালক ও পথচারীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার অনুরোধ জানান।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী জনাব মো: শাকিরুল ইসলাম বলেন – সর্তকর্তার, সচেতনতা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডকে অব্যহত রেখে নোয়াখালী জেলার চলমান সড়ক ও মহাসড়কের কাজ শেষ হলে সড়ক দুঘর্টনা আরো হ্রাস পাবে।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী জেলার এনটিভির প্রতিনিধি জনাব বলেন – চালকেদের মানসিক শান্তি বিরাজ করার জন্য কি করা যায়, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎত, এছাড়া চৌমুহনীতে যনজট নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
নোয়াখালী সদর উপজেলার, উপজেলা নির্বার্হী অফিসার, জনাব আখিনূর জাহান নীলা বলেন- সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আমার পরিবারের একজন সদস্য নিহত হয়। দুর্ঘটনা পরবর্তী অনুসন্ধান করে জানা যায় চালক ঘুমঘুম ভাবে নিয়ে গাড়ি চালাছিলেন।তাই সকল চালকদের অনুরোধ করব ঘুমঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি না চালাবেন না এবং পথচারীদের অনুরোধ করব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে সিভিল সার্জন জনাব ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন- চালকদের শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর দৃষ্টি শক্তি ও শারীরিক পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এতে করে চালকদের মননশীলতা ও দক্ষতা ঠিক থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে নোয়াখালী জেলার সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মো: মোর্তাহিন বিল্লাহ বলেন-একটি অঙ্গীকার, একটি নির্দেশনা সেটি হচ্ছে আইন যথাযথ ভাবে মেনে চলা। ড্রাইভিং পেশা ব্যবসা নয় সেবা। পরিবহন সেক্টরের স্ব স্ব স্টকে হোল্ডারের সমন্বয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় আনলে সড়ক দুর্ঘটনার অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি নোয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসক, জনাব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন – সবার প্রতি একটি নির্দেশনা যথাযথ ভাবে আইন মেনে চলা। সবার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। নোয়াখালী শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য সড়কের মাঝ খানে ডিভাইডারে কিছূ ছোট প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। উক্ত গাছগুলো অসেচতন পথচারী গায়ে ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে ফেলছে। এ ব্যাপারে সচেতনতাসহ ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানো ও নিদির্ষ্ঠ জায়গায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহন পৌরসভা কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে পাকিং করার জন্য অনুরোধ জানান।

তিনি আরো বলেন- নিজ স্বার্থে ইলিয়াছ কাঞ্চন এর একজন ব্যক্তি সড়ক নিরাপত্তা সড়ক চাই নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করছে। তাহার মত আমাদের ও সকলেই দায়িত্ব রয়েছে। ২০৪১সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে সকলেরই অংশগ্রহণ সচেতনা বৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব তামান্ন মাহমুদ বলেন – সড়ক দুর্ঘটনা কারো কাম্য নয়। গাড়ি চালকদের প্রতিযোগিতা, বেপরোয়া ওভারটেকিং, অদক্ষতা, ওভারলোডিং, চালকের পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব, পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানা ও সামাজিক অসচেতনতাসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনারোধে পরিবহন মালিক, গাড়ি চালক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী নির্বিশেষে সবার সচেতনতা জরুরি। এ সংক্রান্ত আইন-বিধিবিধান জানা এবং তা মেনে চলতে হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে উক্ত অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোঘনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *