বরই গাছই ভাগ্য বদলের স্বপ্ন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা’র

দেশের খবর পার্বত্য সংবাদ ব্যবসা বাণিজ্য রাঙ্গামাটি

রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের নীল জলরাশির পাশে দশ একর পাহাড়ি উচু নিচু জমিতে এক হাজার বরই গাছ লাগিয়েছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। সেই বরই গাছে গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাধু মিষ্টি বরই। বল সুন্দরী ও আপেলের মতো দেখতে আপেল বরই,কাশ্মেরী,দেশী জাতের বরই গাছে গাছে পাকা শুরু করেছে। আর এ এক হাজার বরই গাছই সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার ভাগ্য বদল করে তার স্বপ্ন পূরণ করবে বলে আশাবাদী এ তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। স্বপ্ন দেখছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়ার।

রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সোনারাম কাবার্রি পাড়ায় পরিবারসহ বসবাস করেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশির দূর থেকে দেখা যায় সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার বরই বাগান। রাঙামাটি শহর থেকে মোটরসাইকেল করে যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট। পরে আবার আনুমানিক ৬ কিলোমিটার পানি পথে যেতে হয় সুশান্তর বাগানে।

সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু বরই নয়। তিনি গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফলের বাগান। প্রায় বিশ প্রকার মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন সুশান্ত। তিনি বাড়ির আঙিনার ১০ একর জমিতে এক হাজার বরই গাছ লাগিয়েছেন। সেই বরই বাগানে এখন বরই পাকা শুরু করেছে। বরই গুলো সুস্বাধু ও মিষ্টি। বিক্রির জন্য উপযোগী হয়েছে বরই গুলো। বর্তমানে তার বরই বাগানে বল সুন্দরী বরই ও আপেল বরই,কাশ্মেরী ও দেশী এ চার জাতের বরই দেখা গেছে। তার বরই বাগানে কাজ করছেন ৫/৬ জন শ্রমিক। এসব বরই গাছ দেখাশোনা সহযোগিতা করেন সুশান্তের সহধর্মিনী ও তার মেয়ে।

সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার এ বাগান গড়ে তোলায় খুশি তার বাগানে কাজ করা শ্রমিকরা। ১০ জনের অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন সুশান্ত। শুধু তাই নয় তাকে দেখে দেখে অনেকে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের মিশ্র ফলের বাগান। স্থানীয়দের কাছে আপেল বরই (কুল), বল সুন্দরী বরই তাড়াতাড়ি ফলন আসায় এসব বরই চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কথা হয় সুুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার বাগানে কাজ করা দুইজন শ্রমিকের সাথে। ৫ বছর ধরে সুশান্ত তঞ্চঙ্গার মিশ্র ফলের বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন সজল চাকমা নামে এ শ্রমিক। তিনি বলেন,‘সুশান্ত দাদা আমাদের কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন। পরিবার চলছে এখানে কাজ করে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এখানে কাজ করতেছি। দাদার এ কাজের সফলতা দেখে আমারও ইচ্ছে একদিন আমি স্বপ্নের বাগান বানাবো।

সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি এলাকার কয়েকজনকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিয়েছেন। সরকারের উচিৎ সুশান্তকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার দেওয়ার। কেননা সে এ পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য দাবিদার বলে মন্তব্য করছেন, ঐ এলাকাকার স্থানীয় শ্যামল চাকমা। তিনি আরও বলেন,‘সরকার চাইলে অনেককিছু করতে পারে। আমি ২০১৬ সাল থেকে দেখে আসছি সুশান্তর উদ্যোগ। তাকে দেখে দেখে অনেকে মিশ্র ফলের বাগানও সৃষ্টি করেছেন। তিনি গ্রামের একজন আইডল। এসব প্রতিভা টিকিয়ে রাখতে সুশান্তকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার দেওয়া প্রয়োজন।

২০১৬ সালে যখন তিনি এ মিশ্র ফলের বাগান সৃজন করেছেন সুশান্তর বাগানের এক কর্মচারী সুকুমার চাকমা। তিনি বলেন,‘এক হাজার বরই গাছে সবগুলোতে এবার ফলন এসেছে। পাকা শুরু করেছে বরই গুলো। বরই গুলো বেশ সুস্বাধু এবং মিষ্টি। কোনো প্রকার ঔষুধ প্রয়োগ করা হয়নি। পাখিদের থেকে বাঁচাতে শুধুমাত্র বরই গাছের চারপাশে জাল ঘিরে দেওয়া হয়েছে।’ সুকুমার চাকমা আরও বলেন,‘এখানে প্রায় বিশ প্রকার মিশ্র ফল চাষাবাদ হয়। বাগান সৃজন হওয়ার শুরু থেকে এখানে কাজ করতেছি। তার বাগানে সহকারী হিসেবে কাজ করতেছি। সবকিছু দেখাশোনা করি। তার জন্য আমরাও গর্বিত। কেননা তার উদ্যোক্তার কারণে এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। শুধু তাই নয়, সুশান্ত দাদাকে দেখে দেখে আমিও নিজে একটা মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছি। আশা রাখি আগামী বছরে ফলন আসবে।’
বাড়ির আঙিনার চারপাশ ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির পাশে চার প্রকার বরই বাদেও মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল, লটকন, লিচু, আমলকি, পেঁপে, তেঁতুল, মাল্টা, লেবু, বেল, নারিকেল, সুপারি, রাম্বুটান, বিলাতী ধনিয়া পাতাসহ অন্যান্য বারোমাসি ফল রয়েছে। এক হাজার বরই গাছ থেকে ৫/৬ লাখ টাকা আয় হতে পারে বলে আশাবাদী সুশান্ত। তিনি জানান. ‘এক হাজার বরই গাছ থেকে বল সুন্দরী বরই গাছ থেকে নিজে পেরে পেরে ১৫০ টাকা করে বরই বিক্রি করেছেন। এবার তিনি স্বপ্ন দেখছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার লাভের।

এক হাজার বরই গাছ থেকে নিজে বরই পেরে পেরে বিশটা গাছ থেকে ২০ হাজার টাকার বরই বিক্রি করেছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। এক হাজার বরই গাছ থেকে বরই বিক্রি করে ৫/৬ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশাবাদী সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইতে তিনি বলেন,‘বরই গাছগুলোতে বরই পাকা শুরু করেছে। গত সপ্তাহে বাজারে বরই বিক্রি করেছি ২০ হাজার টাকা। এবছরে বরই গাছ থেকে কমপক্ষে ৫/৬ লাখ টাকা আয় হতে পারে। তবে বাগানে কাজ করা শ্রমিকদেরও পারিশ্রমিক দিতে হয়। পারিশ্রমিক দেওয়ার পর ৪ লাখ টাকা লাভ হতে পারে। আমি চাই এ কাজের জন্য সরকার আমাকে পুরস্কৃত করুক। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেলে আরো আশাবাদী আগামীতে কাজ করার।’

তিনি আরও বলেন,‘২০১৬ সালে বাড়ির আঙিনার পাশে মিশ্র ফলের বাগান শুরু করি। প্রথমত আমার স্ত্রী সহযোগিতা করতেন। পরে শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। আমার এ বাগান থেকে শীতকালীন,গ্রাষ্মকালীন,বর্ষাকালীন ফল সারা বছর বিভিন্ন প্রকার ফল বিক্রি করে থাকি। এ বছরে এ বাগান থেকে ১৩ লাখ টাকা আয় হতে পারে। তবে আমার বাগানের ফল সম্পূর্ণ ঔষুমমুক্ত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চলের উপপরিচালক তপন কুমার পাল বলেন,‘রাঙামাটির ৭৮০ হেক্টর জমিতে বরই চাষাবাদ হয়েছে। যা এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮০ মেট্রিকটন। তবে বরই সবে মাত্র বাজারে আসা শুরু করেছে। বল সুন্দরী, আপেল বরইমহ বিভিন্ন প্রকার বরই রাঙামাটির দশ উপজেলাতে চাষাবাদ হয়েছে। আশা রাখি গতবছরের তুলনায় এ বছরে কৃষকরা বরই চাষে লাভবান হবে।

সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার স্বপ্ন দেখার বিষয়ে তপন কুমার পাল বলেন,‘ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। রাঙামাটিতে একটা জেলা কমিটি আছে। তারাই এ ব্যাপারে তালিকা করে থাকে। তবে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা পাওয়ায় এর আগের সুশান্তকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তার বাগান মিশ্র ফলের বাগান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *