রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে লোডশেডিং

পার্বত্য সংবাদ রাঙ্গামাটি লাইফ স্টাইল

রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। দিন কিংবা মধ্য রাত যেকোনো সময় করা হচ্ছে লোডশেডিং। দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং করা হচ্ছে। ফলে দিন ও রাতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকে না শহরে। একবার লোডশেডিং দেওয়া হলে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে বিদ্যুৎ আসতে।

চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোড ম্যানেজমেন্ট করতে হচ্ছে বলে দাবি রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমানের।

জেলা শহরের বাইরে উপজেলাগুলোয় লোডশেডিং আরো বেশি। এতে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। একটা বড় সময় বিদ্যুৎবিহীন জীবন যাপন করতে হচ্ছে। দিনে ও রাতে গরম আবহাওয়ায় ক্ষিপ্ত সাধারণ মানুষ। লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষসহ স্থানীয়রা। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিকমতো নিতে পারছেন না। মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের।

লোডশেডিংয়ের কারণে রাতের ঘুমও হারাম হচ্ছে অনেকের। কষ্টের পাশাপাশি দ্রুত বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের দাবি স্থানীয়দের।

কাপ্তাইয়ে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চার ইউনিটে ১৫০ থেকে ১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত রাঙ্গামাটিবাসী। এই জেলায়ই এখন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ জনজীবন।

পিক আওয়ারে চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না বলে জানান রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পিক আওয়ারে ৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যায় ১০ মেগাওয়াট।

২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ৪টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান রাঙ্গামাটি কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের।

তিনি বলেন, ‘গত বছর এ সময়ের তুলনায় এ বছরে বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে।

নিজের জেলা থেকে এত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি যেন কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।

শহরের উত্তর কালিন্দীপুর সংলগ্ন এলাকায় ওর্য়াকশপে কাজ করা এক শ্রমিক মেহেদি হাসান বলেন, ‘দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং হয়। এ কারণে বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে অর্ডার নেওয়া মালামাল ঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে পারি না। বিদ্যুৎ না থাকলে গরম সহ্য করা গেলেও ঠিক সময়ে মালামাল ডেলিভারি দিতে না পারলে গালি খাওয়া ও গরম দেখানো সহ্য করাটা খুবই কঠিন।’

মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিজয়নগর এলাকার স্কুলছাত্র সুবিত চাকমা। তিনি বলেন, ‘এ ভোগান্তি খুবই অতিরিক্ত। তবে এর আগে তো তেমন ভোগান্তি ছিল না। সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছিল তখন থেকে লোডশেডিং বেড়েছে।’

শহরের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ভোগান্তি উপজেলাতে। একবার লোডশেডিং হলে আর কোনো খবর থাকে না । এ কারণে পড়াশোনাসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান জুরাছড়ি উপজেলার শিক্ষার্থী প্রবিণা চাকমা। তিনি বলেন, ‘গত পরশু বিদ্যুৎ এই যে চলে গেল আর দেখা নেই। পরশু বিদ্যুৎ গিয়েছিল আর গতকাল বিকেলে আধাঘণ্টার মতো ছিল। তার পর থেকে এখনও বিদ্যুৎ নেই জুরাছড়ি উপজেলা সদরে। যার কারণে গরমে ঘুমানো এবং পড়ালেখার সমস্যা হচ্ছে।’

রাঙ্গামাটি নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সহকারী সদস্য সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিসান বখতিয়ার বলেন, বিদ্যুতের দুর্ভোগ কমাতে রুটিন করে লোডশেডিং দেওয়ার নিয়ম চালু করেছে সরকার। এতে আগের থেকে রাঙ্গামাটিতে লোডশেডিং বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সারা দেশে রাত ৮টার পর দোকানপাট ও বিভিন্ন আলোকসজ্জা বন্ধের নির্দেশ দিলেও রাঙ্গামাটিতে তা মানা হচ্ছে না এবং জেলা প্রশাসন থেকে মনিটর না করার কারণে বিদ্যুতের ভোগান্তি বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাঙ্গামাটি শহরে রাত ১১টা পর্যন্ত বাণিজ্য মেলা চললে এখানে বিদ্যুতের ভোগান্তি বাড়বে, তা স্বাভাবিক। কেননা মেলায় রাত ১১টা পর্যন্ত আলোকসজ্জা থাকলে তো বিদ্যুতে ঘাটতি পড়বে। অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ লোডশেডিং হলেও বাণিজ্য মেলায় লোডশেডিং তুলনামূলকভাবে খুব কম। তা ছাড়া আগের মতো রাঙ্গামাটি শহরে বিদ্যুতের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে প্রচারণা চালানো হয় না। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে দেখা যায় না। দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশও মানা হচ্ছে না।

অন্যদিকে বাণিজ্য মেলা বসানোর অনুমতি ও রাত ১১টা পর্যন্ত বাণিজ্য মেলার কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল-মামুন মিয়া বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে রাঙ্গামাটি শহরে আলোকসজ্জাসহ দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মেলা যাতে রাত ৮টার পর বন্ধ করা হয়, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে মেলায় ম্যাজিস্ট্রেট টিম সবসময় মনিটর করছে। শুধু তা-ই নয়, মাইকিং করে শহরে টিকিট বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। সে কারণে তারা যাতে মাইকিং করে যাতে টিকিট বিক্রি করতে না পারে, কর্তৃপক্ষকে বলে দেয়া হয়েছে।

রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেন, ‘রাঙ্গামাটি জেলা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৩০ মেগাওয়াট। তার মধ্যে দিনের বেলা পিক আওয়ারে ১০ মেগাওয়াট আর রাতের বেলা পিক আওয়ারে গড়ে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে সারা দেশের মতো এখানেও লোড ম্যানেজমেন্ট করতে হচ্ছে। তবে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে লোডশেডিং অনেকাংশে কমে যাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *