রাঙামাটিতে বসবাসরত চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা তিন জাতি গোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ শিশু শিক্ষার্থী পেয়েছে নিজ মাতৃভাষার পাঠ্য বই। রোববার সকালে সারাদেশের ন্যায় রাঙামাটিতেও নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে দেওয়া হয়েছে নিজ মাতৃভাষার নতুন পাঠ্য বই। যদিও এসব নিজ মাতৃভাষার পাঠ্য বই পেয়েও তেমনটা খুশি নন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। তারা মনে করছেন, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ প্রশিক্ষক বিদ্যালয়ে না থাকাতে বিগত ছয় বছরেও নিজ মাতৃভাষার বই শেখার ক্ষেত্রে ফলপ্রসু আসেনি। এসব পাঠ্য বই পেলেও কোনো কাজে আসছে না।
অন্যদিকে মাতৃভাষার পাঠদানে শিক্ষক সংকট নয় বলে দাবি করেছেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রম্ন চৌধুরী।
এবারে রাঙামাটি জেলায় ১০ উপজেলার ১হাজার ৬৪টি বিদ্যালয়ে প্রাক—প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি বই বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া চাকমা,মারমা ত্রিপুরাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাক—প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্ষন্ত ২৯ হাজার ৮০৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৬৬ হাজার ২৫০টি মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলায় ১০ উপজেলার ১০ হাজার ৬৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাক—প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্ষন্ত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজ মাতৃভাষার পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়ছে। প্রাক প্রাথমিকে প্রতি জনে দুটি করে ১৫ হাজার ৮২০টি বই, প্রথম শ্রেণীতে প্রতি জনে তিনটি করে ২২ হাজার ৪১৬টি বই, দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রতি জনে তিনটি করে ২২ হাজার ৬৩৫টি বই ও তৃতীয় শ্রেণীতে প্রতি জনে একটি করে ৬ হাজার ৮৭৯টি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অথ্যার্ৎ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রাঙামাটির ১০ উপজেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ২৯ হাজার ৮০৬ শিক্ষার্থীর মাঝে ৬৭ হাজার ৭৫০টি মাতৃভাষার পাঠ্য বই বই বিতরণ তুলে দেওয়া হয়।
রোববার সকালে রাঙামাটি শহরের বনরুপা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠ্য বই বিতরণে আনু্ষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরে জেলার ১০ উপজেলায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বনরুপা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ উৎসবে অংশ নেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রম্ন চৌধুরী। এসময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন, বনরুপা সরকারী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, রাঙামাটির অন্যতম বিদ্যালয় লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে উৎসবমূখর পরিবেশে পাঠ্য বই বিতরণ করেন সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমতাস উদ্দীন। এসময় সদর জোন কমান্ডার লেঃকর্নেল আজিকুর রহমান, লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর মীর সোহানসহ শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় শিক্ষার্থীরা নতুন বছরে নতুন বই পেয়ে উচ্ছিত।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক শুভদেবী চাকমা বলেন,‘আমার মেয়ে নিজ মাতৃভাষা চাকমা ভাষার পাঠ্য বই পেয়েছে। এ কারণে আমার মেয়ের পাশাপাশি আমিও খুব খুশি। কেননা, আমার মেয়ে এখন থেকে নিজ মাতৃভাষার বই বই পড়তে পারবে। তবে শুধু পাঠ্য বই বিতরণ করলে হবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরো নজর দিতে হবে। যাহাতে নিজ মাতৃভাষার বইয়ের উপর পরীক্ষা নেওয়া হয়।’
বনরূপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক নুথুই মারমা বলেন, ‘আমার ছেলে বাংলা,ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি নিজ মাতৃভাষা মারমা ভাষার অক্ষরগুলো শিখবে তা অত্যান্ত খুশির খবর। বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগ খুবি প্রশংসনীয়। তবে এ আমার ছেলে মারমা মাতৃভাষার বই পেয়েও কোনো লাভ হয়নি। কেননা, এ বিদ্যালয়ে মামরা মাতৃভাষা জানেন, প্রশিক্ষণ দিতে পারেন সে ধরনের শিক্ষক নেই। সবাই চাই নিজ মাতৃভাষার পাঠ্য বই পড়–ক এবং শিখুক। সরকার যদি চাই মারমাসহ সব মাতৃভাষার শিক্ষকের ব্যবস্থা সম্ভব।’
অন্যিদেক রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মো সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রাক প্রাথমিকে নিজ মাতৃভাষার ওপর মূল্যায়ন পরীক্ষা ভিন্ন রকম। তবে প্রথম শ্রেণিতে মূল্যায়ন পদ্ধতি আসছে। ও করম আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা পদ্ধতি থাকবে কিনা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে নিজ মাতৃভাষার পরীক্ষায় মূল্যায়ন পদ্ধতি যদি যাহাতে করা হয় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সাল থেকে পাঠ্য বই তিবরণ পর পর কিছু শিক্ষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরবতীর্তে প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট(পিটিআই) থেকেও প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক সংকট ও প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রম্ন চৌধুরী বলেন, যে সকল শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে সেসব শিক্ষকদের নিজস্ব ভাষায় প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠদানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে এ এখনও পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার মাতৃভাষা যাহাতে পাঠদান করতে পারে জেলা পরিষদ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি প্রাক প্রাথমিকে নিজ মাতৃভাষার শিক্ষা প্রতি সপ্তাহে দুইদিন করে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে।’